ওয়াকফ বিল কী? কেন এই বিল বিতর্কিত?
ওয়াকফ বিল কী? কেন এই বিল বিতর্কিত? ভারতের মুসলিমদের বর্তমানে একটাই দাবি ওয়াকফ বিল সংশোধন বাতিল করতে হবে। এ নিয়ে ভারত জুড়ে প্রবোল আন্দোলন চলছে। এমনকি ওয়াকফ বিল সংশোধন বাতিলের জন্য বাংলাদেশের ছাত্রশিবির পর্যন্ত প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। এই বিল যদি কার্যকর হয় তাহলে নাকি মুসলমানদের ওপর চরম নির্যাতন নেমে আসবে?
মসজিদ মাদরাসা আইনগত ভাবে বন্ধ করতে পারবে হিন্দুরা। আরো অনেক কিছু যা ভারতের মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতা কেড়ে নিবে বলে অনেকেরই ধারণা। এই ওয়াকফ বিল আসলে কি? আগে এটা কেমন ছিল? এখনই বা এতে কী পরিবর্তন আনা হচ্ছে?
কেনও বা মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেকে এর বিরোধিতা করছেন? এই আইন বাস্তবায়ন হলে কী হবে? মুসলিমদের লাভ-ক্ষতি কী? হিন্দুদেরই বা লাভ কী? এর পিছনে কি কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে ? আর ভারতের সাধারণ মানুষই বা কী ভাবছে? চলুন, এক এক করে সব প্রশ্নের উত্তর খুজি? ওয়াকফ বিল কী? কেন এই বিল বিতর্কিত?
ওয়াকফ বিল কী?
প্রথমে জানা যাক, ওয়াকফ বিল কী? ‘ওয়াকফ’ একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ হলো কোনো সম্পত্তি ধর্মীয়, শিক্ষাগত বা দাতব্য কাজের জন্য চিরকালের মতো দান করে দেওয়া। ভারতে, এই সম্পত্তি মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান এবং এতিমখানার মতো কাজে ব্যবহৃত হয়।
আর এই সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণের জন্য আছে ওয়াকফ বোর্ড । বর্তমানে ভারতে ‘ওয়াকফ অ্যাক্ট, ১৯৯৫ নামে একটি আইন আছে, যা ২০১৩ সালে সংশোধন করা হয়েছিল। এখন সরকার ওয়াকফ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল ২০২৪ নিয়ে এসেছে, যা ২০২৫ সালে পার্লামেন্টে পাশ হয়েছে।
আসলে ওয়াকফ অ্যাক্ট আগে কেমন ছিল?
১৯৯৫ সালের আইনে বলা ছিল, ওয়াকফ সম্পত্তি শুধু মুসলিমরাই দান করতে পারবে, এবং এটি ওয়াকফ বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। ২০১৩ সালে সংশোধনীর মাধ্যমে নিয়ম কিছুটা শিথিল করা হয়।
এখন যে কেউ সম্পত্তি দান করতে পারবে। ওয়াকফ বোর্ডের সিদ্ধান্ত ছিল চূড়ান্ত, এবং সম্পত্তির উপর দীর্ঘদিনের ব্যবহারের ভিত্তিতে এটিকে ওয়াকফ ঘোষণা করা যেত। এই আইনের অধীনে ভারতে প্রায় ৮.৭ লাখ সম্পত্তি রয়েছে, যা ৯.৪ লাখ একর জমি জুড়ে বিস্তৃত।ওয়াকফ বিল কী? কেন এই বিল বিতর্কিত?
এখন নতুন বিলে কী পরিবর্তন আনা হয়েছে?
১. ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিম সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
২. শুধুমাত্র যিনি ৫ বছর ধরে ইসলাম পালন করছেন, তিনিই সম্পত্তি দান করতে পারবেন।
৩. ওয়াকফ বাই ইউজার’ ধারণা বাদ দেওয়া হয়েছে অর্থাৎ দীর্ঘদিন ব্যবহারের ভিত্তিতে সম্পত্তি ওয়াকফ হবে না।
৪. সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে বিরোধ থাকলে জেলা কালেক্টর বা সিনিয়র অফিসার সিদ্ধান্ত নেবেন, ওয়াকফ ট্রাইব্যুনাল নয়।
৫. সমস্ত সম্পত্তি একটি কেন্দ্রীয় পোর্টালে নিবন্ধন করতে হবে।
সরকার বলছে, এতে স্বচ্ছতা বাড়বে।
তবে কেন মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেকে এই আইন মানছেন না?
মুসলিমদের মতে এটি ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ। সংবিধানের ২৬ নম্বর অনুচ্ছেদে ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নিজস্ব বিষয় পরিচালনার অধিকার দেওয়া আছে। অমুসলিমদের বোর্ডে রাখা এটির লঙ্ঘন।
ওয়াকফ বাই ইউজার’ বাদ দেওয়ায় অনেক ঐতিহাসিক মসজিদ বা কবরস্থানের মালিকানা হারানোর ভয় করছে ।
সরকারি কর্মকর্তাদের হাতে সিদ্ধান্তের ক্ষমতা যাওয়ায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের আশঙ্কা হচ্ছে। ওয়াকফ বিল কী? কেন এই বিল বিতর্কিত?
অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড (AIMPLB) এটিকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে বিরোধিতা করছে
এই আইন বাস্তবায়ন হলে কী হবে?
সরকারের দাবি, ওয়াকফ সম্পত্তির অপব্যবহার কমবে, স্বচ্ছতা বাড়বে। কিন্তু বিরোধীরা বলছেন, অনেক সম্পত্তি সরকার বা ব্যক্তি দখল করতে পারে, কারণ ১২ বছরের বেশি দখলে থাকলে ‘লিমিটেশন অ্যাক্ট’ দিয়ে মালিকানা দাবি করা যাবে।এখানে মুসলিমদের ক্ষতি হতে পারে, যদি এভাবে তাদের ধর্মীয় সম্পত্তি হারায়।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কী? বিজেপি সরকার বলছে, এটি দুর্নীতি দূর করার জন্য। কিন্তু বিরোধী দলগুলো, যেমন কংগ্রেস, AIMIM, এবং DMK, দাবি করছে এটি মুসলিমদের দুর্বল করার এবং হিন্দু ভোট একত্রিত করার কৌশল। তারা বলছে, এটি সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরি করে বিজেপির ভোট বাড়াবে।
এ বিষয়ে ভারতের বিখ্যাত মুসলিম নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বলেছেন এটি মুসলিমদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বানাবে। তিনি এটিকে ‘ওয়াকফ বরবাদ বিল’ বলে সম্বোধন করেছেন। তিনি বলছেন এটি কালো দিন। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করবো।
এ বিষয়ে বিজেপি নেতা অমিত শাহ বলেছেন, এটি ধর্মীয় হস্তক্ষেপ নয় এটি মুলত স্বচ্ছতার জন্য করা হচ্ছে।
ভারতের সাধারণ মানুষ এ বিষয়ে কী ভাবছে? কেউ কেউ মনে করেন, এটি দুর্নীতি কমাতে সাহায্য করবে। আবার অনেকে, বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়, এটিকে ধর্মীয় হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া কেউ সমর্থন করছেন, কেউ বলছেন এটি অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক।
তো, এই ছিল ওয়াকফ বিল নিয়ে সকল প্রশ্নের সমাধান । এই আইন কি সত্যিই স্বচ্ছতা আনবে, নাকি নতুন সমস্যা তৈরি করবে? আপনার মতামত কী? কমেন্টে জানান