
গোপালগঞ্জে এনসিপির ওপর হামলার আসল কারণ কী?
গোপালগঞ্জে এনসিপির ওপর হামলার আসল কারণ কী?
জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে আজ ১৬ জুলাই এনসিপি গোপালগঞ্জে তাদের কর্মসূচি ঘোষণা করে। এ কর্মসূচি ভণ্ডুল করতে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো নানা বাধা সৃষ্টি করে। গোপালগঞ্জে ঢুকতে না দিতে, রাস্তায় গাছ ফেলে অবরোধ করা হলেও, প্রশাসনের সহায়তায় শেষ পর্যন্ত এনসিপির গাড়িবহর প্রবেশ করতে সক্ষম হয়।
সমাবেশের পথে আওয়ামী লীগের কর্মীরা ইটপাটকেল ও ককটেল বোমা নিক্ষেপ করে হামলা চালায়। তবুও এনসিপির নেতারা সমাবেশস্থলে পৌঁছে বক্তব্য রাখেন।
হাসনাত আবদুল্লাহ ঘোষণা দেন –
“গোপালগঞ্জ থেকে মুজিববাদের নাম মুছে যাবে।”
আরেক নেতা সারজিস আলম বলেন –
“গোপালগঞ্জ কারো বাপ-দাদার সম্পত্তি নয়, এটা বাংলাদেশের।”

তবে বক্তব্য শেষ না হতেই ফের হামলা হয়। শেষ পর্যন্ত নেতারা পুলিশ সুপারের দপ্তরে আশ্রয় নেন। তবে হাসনাত আবদুল্লাহ বাইরে বেরিয়ে যেতে চাইলে তাঁকে থামানো হয়।গোপালগঞ্জে এনসিপির ওপর হামলার আসল কারণ কী?
হামলার সময় দুর্বৃত্তরা পুলিশের গাড়ি পুড়িয়ে ও অন্যান্য যানবাহন ভাঙচুর করে, আগুন লাগিয়ে পুরো গোপালগঞ্জকে রণক্ষেত্রে পরিণত করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী মাঠে নামে এবং কয়েকজন হামলাকারীকে আটক করা হয়েছে। কোথাও কোথাও গুলি বিনিময়ও হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু আসলেই কেন এই হামলা?
অনেকে বলছেন – “গোপালগঞ্জ আওয়ামী লীগের ঘাঁটি, এখানে অন্য কোনো দলের ঠাঁই নেই।”ঙএই ধারণা অনেকটাই সত্য হলেও পুরোপুরি নয়। এর পেছনে রয়েছে গোপালগঞ্জবাসীর বৃহৎ স্বার্থ।

বিশেষজ্ঞদের মতে – যেমন সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন বলেছেন – আওয়ামী লীগের অনেকেই দেশ ছেড়ে পালালেও অনেকে এখনো গোপালগঞ্জেই লুকিয়ে আছে। আর সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার উজজামান তাদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে।
গোপালগঞ্জবাসীর বৃহৎ স্বার্থ
আওয়ামী লীগ আমলে গোপালগঞ্জ ছিল এক ধরনের “ব্র্যান্ড”। বাংলাদেশের যে কোনো সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে গোপালগঞ্জ পেত একচেটিয়া সুবিধা। এমন কথাও প্রচলিত “চাকরির ক্ষেত্রে তোমার বাড়ি কোথায়? গোপালগঞ্জ! তাহলে তো চাকরি পাকা!”
বাংলাদেশের এমন কোনো সরকারি সেক্টর নেই যেখানে গোপালগঞ্জের জনগণ চাকরি পায়নি। শেখ হাসিনা তাদের জন্য সুযোগ-সুবিধার কোনো কমতি রাখেননি।
স্বৈরাচার শেষ, সুবিধা শেষ!

এখন যখন স্বৈরাচারী হাসিনা পালিয়ে গেছেন, গোপালগঞ্জ আর সেই সব সুযোগ-সুবিধা পাবে না। গোপালগঞ্জবাসী এতদিন যে মধু খেয়েছে, সেই মধুর নেশা কি এত সহজে ভোলা যায়?
বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান ৫৪ বছর পর কে এগিয়ে?
গোপালগঞ্জের রাস্তাঘাট, অবকাঠামো সবকিছুতেই উন্নতির ছোঁয়া লেগেছিলো হাসিনার শাসনামলে। এর সুফলও পেতেন তিনি -গত ১৬ বছরে গোপালগঞ্জে হাসিনার আসনে কেউ দাঁড়াতে সাহস পায়নি, দাঁড়ালেও ভোট পায়নি।
গোপালগঞ্জ ছিল স্বৈরাচারের প্রথম ঘাঁটি
নিজ এলাকায় যদি হাসিনা কোনোভাবে হেরে যেতেন, তাহলে লজ্জার শেষ থাকত না। তাই গোপালগঞ্জই ছিল স্বৈরাচারের মূল ঘাঁটি। এখানে অন্য দলে ভোট দেওয়ার সাহসই ছিল না সাধারণ মানুষের। এ পরিবেশ সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন শেখ হাসিনা।
ছাত্ররা জীবন দিয়ে, আন্দোলন সংগ্রাম করে বাংলাদেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করলেও গোপালগঞ্জ এখনো স্বৈরাচার মুক্ত নয়।এজন্যই আওয়ামী লীগের পলাতক নেতারা যারা দেশ ছাড়তে পারেনি, তারা গোপালগঞ্জে আশ্রয় নিয়েছে।গোপালগঞ্জে এনসিপির ওপর হামলার আসল কারণ কী?
আওয়ামী লীগের লুটকৃত টাকা এবং জনগণের মধ্যে বণ্টন
দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে যতো টাকা লুট করেছে আওয়ামী লীগ, সেই টাকা এখন বিদেশ থেকে এনে গোপালগঞ্জের সাধারণ মানুষের মধ্যে বিলি করা হচ্ছে।এর মাধ্যমে তারা গোপালগঞ্জবাসীকে নতুন সরকারবিরোধী অবস্থানে দাঁড় করাতে চাইছে।এসব করতে সাহায্য করছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা আর লুকিয়ে থাকা পলাতক নেতারা।

সেনাবাহিনী প্রধানের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ!
সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের দাবি – সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার উজজামান এই ষড়যন্ত্রে সহায়তা করছেন।
এর প্রমাণ হামলার ধরণেই স্পষ্ট।বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা NSI থাকলেও গোপালগঞ্জের মতো ঘটনা কেন আগে থেকে প্রতিরোধ করা যায় না?যেখানে ভারতের RAW কিংবা পাকিস্তানের ISI দেশের ভেতর-বাইরে সক্রিয়, সেখানে NSI কেন অকার্যকর?
প্রশাসন কোথায়?
হামলার সময় পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর হচ্ছে, পুলিশ পালাচ্ছে, ইএনও’র গাড়িও হামলার শিকার হচ্ছে।
কেন প্রশাসন ঘটনার পর অ্যাকশনে যাচ্ছে? কেন একবছরেও গোপালগঞ্জে কোনো সাড়াশি অভিযান হয়নি?
সবাই জানে কীভাবে এসব হচ্ছে, কারা করছে – তবুও প্রশাসন নীরব!
এখন দেখার বিষয়
এখন দেখার বিষয়, এনসিপির ওপর হামলার পরে প্রশাসন কী ভূমিকা পালন করে? এবার কি গোপালগঞ্জে সত্যিই সাড়াশি অভিযান হবে? না কি অজানা কারণে প্রশাসন আবারও নীরব থাকবে? আর সেক্ষেত্রে এনসিপির নেতারা কী করবেন?

তবে একথা সত্য – গোপালগঞ্জবাসীকে বুঝিয়ে কিছু হবে না। তারা যে সুযোগ-সুবিধা পেত, কোনো সরকার আর তা দিতে পারবে না। তাই গোপালগঞ্জের ভোট অন্য দলে যাবে কি না, তা নির্ভর করবে হাসিনা তাদের কী নির্দেশ দেন তার ওপর।
Hridoy Observer – দেশ ও ইসলামের কথা বলে।গোপালগঞ্জে এনসিপির ওপর হামলার আসল কারণ কী?