
জাতিসংঘ কেন ফিলিস্তিন সংকট মোকাবেলায় ব্যর্থ!
জাতিসংঘ কেন ফিলিস্তিন সংকট মোকাবেলায় ব্যর্থ!আমাদের অনেকের মনের প্রশ্ন। ফিলিস্তিনিদের ওপর এমন নারকীয় অত্যাচার হবার পরও জাতিসংঘ কেন কিছু করছে না ।
জাতিসংঘ তো বিশ্ব শান্তি রক্ষা বজায় রাখবার জন্য কাজ করে কিন্তু ফিলিস্তিনিদের সময় তারা কেন মুখ ফিরিয়ে নেয়। কেনও বা জাতিসংঘ শুধুমাত্র নিন্দা জানানো ছাড়া কিছুই করেনা। জাতিসংঘ কি আমেরিকার নিয়ন্ত্রণে চলে।
কেন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান নির্যাতন সম্পর্কে সচেতন থাকার পরেও এই গুরুতর ইস্যুতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হচ্ছে? আসলে এর পেছনে রয়েছে বেশ কয়েকটি জটিল, কূটনৈতিক এবং কাঠামোগত কারণ।

এই বিষয় গুলো গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে বোঝা যাবে জাতিসংঘের সীমাবদ্ধতা এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির গতিপ্রকৃতি এই ব্যর্থতার মূল চালিকাশক্তি। নিচে এই কারণগুলো বিস্তারিতভাবে এবং সুসংগঠিতভাবে উপস্থাপন করা হলো:
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো ক্ষমতার প্রভাব। জাতিসংঘের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী অঙ্গ হলো নিরাপত্তা পরিষদ। যেখানে পাঁচটি স্থায়ী সদস্য -যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীন এবং ফ্রান্স – ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। এই ক্ষমতার কারণে যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বা প্রস্তাব এককভাবে বাতিল হয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ বাকি চারটি দেশ যদি ফিলিস্তিনের পক্ষেও থাকে তাও একা যুক্তরাষ্ট্রও সেটি বাতিল করতে পারে। জাতিসংঘ কেন ফিলিস্তিন সংকট মোকাবেলায় ব্যর্থ
যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রতি তার দীর্ঘদিনের সমর্থনের জন্য পরিচিত। ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো প্রস্তাব আনা হলে যুক্তরাষ্ট্র প্রায়শই ভেটো প্রয়োগ করে থাকে। যারফলে ফিলিস্তিনিদের জন্য কোনো সাহায্য বাস্তবে কার্যকর হয় না।
উদাহরণস্বরূপ, অতীতে বহুবার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব বা ইজরাইলে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনি মোতায়েনের প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে ব্যর্থ হয়েছে।

এই ভেটো ক্ষমতার ফলে ফিলিস্তিনি জনগণের পক্ষে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষে সম্ভব হয়না।
তারপরে আসে,
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে গভীর রাজনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক। ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত মিত্র, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে। এই সম্পর্ক শুধুমাত্র রাজনৈতিক নয়, ধর্মীয়, সামরিক এবং অর্থনৈতিকভাবেও গভীর।
এজন্যও যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে প্রতিবছরে বিলিয়ন ডলারের সামরিক ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। এই সমর্থনের ফলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অনীহা দেখা যায়। কারণ তারাই তো বোমা কেনার টাকা দিচ্ছে। আর তারা কি চাবে সেটি ব্যবহার না হোক। জাতিসংঘ কেন ফিলিস্তিন সংকট মোকাবেলায় ব্যর্থ
আর যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে, ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্যাতন বন্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ সম্ভব হয় না।

আসলে জাতিসংঘ একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা হলেও এর কার্যকারিতা সদস্য রাষ্ট্রদের সম্মতি ও সহযোগিতার ওপর নির্ভরশীল।
আবার এ বিষয়ে অনেক ঐক্যমতের অভাবও রয়েছে। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের বিষয়ে বিশ্বব্যাপী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে কোনো ঐক্য নেই। কিছু দেশ ইসরায়েলকে সমর্থন করে, আবার কিছু দেশ ফিলিস্তিনের পক্ষে। যেমন বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের পক্ষে আবার ভারত ইজরায়েলের পক্ষে। এই বিভক্তির ফলে কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে না জাতিসংঘ।
তাছাড়াও জাতিসংঘের কাছে নিজস্ব সামরিক বা নির্বাহী ক্ষমতা নেই। ফলে, কোনো প্রস্তাব গৃহীত হলেও তা বাস্তবায়নের জন্য সদস্য রাষ্ট্রদের ওপর নির্ভর করতে হয়, যা প্রায়শই সম্ভব হয় না। কারণ উন্নত দেশ গুলো সব খ্রিষ্টান প্রধান। মুসলিম বিশ্বের দেশ গুলো খুবই গরিব। আর কিছু দেশ উন্নত থাকলেও তারা আমেরিকার ভয়ে কিছুই বলে না। তাই জাতিসংঘ কিছুই করতে পারে না।
আবার যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে ইসরায়েলের সমর্থনে শক্তিশালী লবিগ্রুপ তৈরি করেছে। এই গ্রুপগুলো জাতিসংঘের ওপর পরোক্ষভাবে চাপ সৃষ্টি করে। আবার জাতিসংঘের বাজেটে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর বড় অবদান রয়েছে। এই অর্থনৈতিক নির্ভরতা জাতিসংঘকে কিছু ক্ষেত্রে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে বাধা দেয়। জাতিসংঘ কেন ফিলিস্তিন সংকট মোকাবেলায় ব্যর্থ

আর এসব কারনে প্রস্তাব গ্রহণের পরও বাস্তবায়নের অভাব জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পক্ষে বা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বহুবার প্রস্তাব গৃহীত হবার পরেও সেগুলো বাস্তবায়ন বেশিরভাগ সময়ই হয়নি । তাছাড়াও জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবগুলো আইনত বাধ্যতামূলক নয়। নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব বাধ্যতামূলক হলেও, ভেটো ক্ষমতার কারণে তা পাস হওয়া কঠিন।
ইসরায়েল বারবার জাতিসংঘের প্রস্তাব অমান্য করেছে, যেমন অবৈধ বসতি নির্মাণ বন্ধের আহ্বান। জাতিসংঘের কাছে এই অমান্যতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা নেই।
জাতিসংঘ একটি বৈশ্বিক ফোরাম হিসেবে বিশ্ব শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করলেও, এর কার্যকারিতা বড় পরিসরে রাজনৈতিক ক্ষমতা, ভেটো ব্যবস্থা এবং সদস্য রাষ্ট্রদের স্বার্থ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
ফিলিস্তিন ইস্যুতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জাতিসংঘের কাঠামোগত সংস্কার, বিশেষ করে ভেটো ক্ষমতার সীমিতকরণ এবং আন্তর্জাতিক ঐক্যমত্য প্রয়োজন। এই পরিবর্তন না হলে ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান নির্যাতন বন্ধে জাতিসংঘের ভূমিকা কেবল প্রতীকী ও সীমিত পর্যায়েই থেকে যাবে।
আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল মুসলিম বিশ্ব এক হতে হবে। আর আমাদের জ্ঞান বিজ্ঞানেে চর্চা করতে হবে। যাতে। আমরাও বিভিন্ন প্রযুক্তিতে এগিয়ে যেতে পারি। জাতিসংঘ কেন ফিলিস্তিন সংকট মোকাবেলায় ব্যর্থ