
ফিলিস্তিন সংকট: দায় কার- ইসরাইল নাকি আরব বিশ্ব?
ফিলিস্তিন সংকট: দায় কার- ইসরাইল নাকি আরব বিশ্ব? আজ ফিলিস্তিনের এই অবস্থা কেন? এর পেছনে কি শুধুই ইসরায়েল? নাকি আমাদের মুসলমানদের মধ্যেই কেউ ছিলো বিশ্বাসঘাতক
আজকের ফিলিস্তিন সংকটের ইতিহাস এক-দু’দিনের নয়। এর পেছনে শত শত বছরের রাজনৈতিক খেলা, সাম্রাজ্য পতন, বিশ্বাসঘাতকতা এবং মুসলিম উম্মাহর দুর্বলতার জন্য হয়েছে।
১৮০০ ও ১৯০০ শতকের দিকে মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব ছিল অটোমান বা উসমানী সাম্রাজ্যের হাতে। ফিলিস্তিন তখন উসমানীদের অধীনে ছিল, যেখানে মুসলমান, ইহুদি, খ্রিস্টান সবাই মিলেমিশে শান্তিপূর্ণভাবে বাস করতো।

কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আরবদের একটি অংশ ব্রিটিশদের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়, কারণ তারা চায়নি তুর্কিরা অথবা ননআরবেরা আর মুসলিম বিশ্বকে নেতৃত্ব দিক। তারা চেয়েছিলো আরবদের হাতে আবারো মুসলিম বিশ্বের ক্ষমতা আসুক। তাই আরবেরা ব্রিটিশদের সাথে হাত মিলায়।
ব্রিটিশরা তখন “Arab Revolt” নামে একটি চুক্তির মাধ্যমে আরবদের উসকে দেয় – প্রতিশ্রুতি দেয় স্বাধীন আরব রাষ্ট্রের। আর এই বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমেই ধ্বংস হয়ে যায় উসমানী সাম্রাজ্য।ফিলিস্তিন সংকট: দায় কার- ইসরাইল নাকি আরব বিশ্ব?
ব্রিটিশদের ভূমিকায় ইহুদি রাষ্ট্রের জন্ম হয় যেভাবে
উসমানী সম্রাজ্যের পতনের পর ব্রিটিশরা ফিলিস্তিন দখল করে নেয়। ১৯১৭ সালে তারান Balfour Declaration”-এর মাধ্যমে ইহুদিদের একটি জাতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়।
এরপর শুরু হয় পরিকল্পিতভাবে ইহুদিদের ফিলিস্তিনে আনা। ইহুদিরা প্রথমে ফিলিস্তিনিদের কাছ থেকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মুল্য দিয়ে জমি কিনতে থাকে। অনেক ফিলিস্তিনি তখন অধিক মুল্যের জন্য তাদের কাছে জমি বিক্রয় করতে থাকে।

এদিকে তখন ফিলিস্তিন ব্রিটিশদের অধিনে তাই ইহুদিদের কিছু বলতে পারিনি মুসলিমরা। সাথে তখন আবার হিটলার ইহুদি নিধন করছিলো। তাই মানবিক কারণেও তাদের কে থাকতে দেয় ফিলিস্তিন বাসী।
একবার ভেবে দেখেন শুধুমাত্র আরবদের বিশ্বাসঘাতকতার জন্য আজ ফিলিস্তিন কেন? পুরো মুসলিম বিশ্ব তাদের ক্ষমতা হারিয়েছে।
আরবদের কারণে আজ মুসলিম বিশ্ব টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। আর এখন পৃথিবীর সুপার পাওয়া হল খ্রিষ্টানরা। আর মুসলিম নেতাদের এএমনই অবস্থা যে, একটু টুই শব্দ পর্যন্ত করতে ভয়। যদি তাদের গদি না থাকে।
১৯৪৮ সালে যখন ইসরায়েল রাষ্ট্র ঘোষণা করা হয়, তখন কিছু মুসলিম দেশ প্রতিবাদ করলেও, বড় পরিসরে মুসলিম বিশ্ব ঐক্যবদ্ধ ছিল না। এরপর প্রতিবার ইসরায়েল হামলা করেছে গাজায়, পশ্চিম তীরে – কিন্তু আমরা মুসলিমরা শুধু সমাবেশ করেছি, স্লোগান দিয়েছি, আর সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছি।
আর যেসব সোসিয়াল মিডিয়ায় পোস্ট করেছি সেগুলোর মালিকও ইহুদি খ্রিষ্টানেরা। ইজরায়েলের বিরুদ্ধে কথা বললে পোস্ট ডিলিট হয়ে যায়। তাহলে বোঝেন আজ মুসলিম বিশ্বের অবস্থান কথায়। প্রতিবাদ জানানোর মতনও মুসলমানদের কোনো নিজস্ব সোসিয়াল মিডিয়া সাইট নেই।

আজ যখন আরব দেশগুলো আমেরিকার চাপে পড়ে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে, তখন হামাসের মতো প্রতিরোধ আন্দোলন বাধ্য হয় প্রতিক্রিয়া দেখাতে। কারণ তারা জানে – মুসলিম বিশ্ব চুপ থাকলে, একদিন ফিলিস্তিন মানচিত্র থেকেও মুছে যাবে।
এখন প্রশ্ন হলো – আজ ফিলিস্তিনের এই অবস্থার জন্য শুধু কি ইসরায়েল দায়ী? না কি ইতিহাসের সেই আরব বিশ্বাসঘাতকতাও এর পেছনে একটি বড় কারণ?ফিলিস্তিন সংকট: দায় কার- ইসরাইল নাকি আরব বিশ্ব?
আমরা জানি, রাজনৈতিক কারণ আছে, অর্থনৈতিক কারণও আছে, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র আছে। কিন্তু মুসলিম বিশ্ব যদি ঐক্যবদ্ধ থাকতো, নিজের ইতিহাস ভুলে না যেত, তাহলে কি ফিলিস্তিন আজ এতটা নির্যাতিত হতো?
প্রিয় মুসলিম ভাই বোনেরা। ইতিহাস শুধু জানার জন্য নয় বরং শিখবার জন্য। আমরা যদি ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নেই, তাহলে ভবিষ্যতেও বারবার আমাদের একই ভুলের খেসারত দিতে হবে। মুসলিম বিশ্ব সবসময় অত্যাচারিত হতে থাকবে।
আসুন, আমরা শুধু আবেগ নয়, বুদ্ধিমত্তা, ঐক্য ও জ্ঞানের মাধ্যমে ফিলিস্তিন ইস্যুকে বুঝি, অন্যদের জানাই এবং অন্তত নিজেকে একজন সচেতন মুসলিম হিসেবে গড়ে তুলি

সবচেয়ে বড় কথা হল আমাদের কুসংস্কার, সন্ত্রাসী কার্যক্রম ইত্যাদি বাদ দিয়ে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা করতে হবে। যাতে আমরা নিজেদের পরিচয় গড়ে তুলতে পারি। ফিলিস্তিন সংকট: দায় কার- ইসরাইল নাকি আরব বিশ্ব?
একবার ভেবে দেখেন, আজ আমরা যা কিছু ব্যবহার করি তার মধ্যে অধিকাংশও অন্য ধর্মের মানুষ তৈরি করেছে। তাহলে আমরা কি করলাম। ভাবেন! আর মনে রাখবেন আল্লাহ তাদেরই সাহায্য করে যারা নিজেদের সাহায্য করতে জানে। আপনি এক পা এগবেন তারপর তো আল্লাহ আপনাকে তিন পা এগিয়ে দিবে। আর একথাও মনে রাখবেন আপনি একজন মুসলমান যেমন আল্লাহ বান্দা তেমনি অন্য ধর্মের মানুষও আল্লাহর বান্দা। আল্লাহ সবাই কে ভালোবাসেন।
যাবার আগে বলি, ইজরায়েলই পণ্য বইকট করবার নামে জুতা চুরি বন্ধ করেন। আপনাদের জন্য পুরো জাতি লজ্জিত।
যাইহোক, ফিলিস্তিনের আজকের এই অবস্থার জন্য আপনি কাকে সবচেয়ে বেশি দায়ী মনে করেন? কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমি অবশ্যও রিপ্লাই দিবো।
Hridoy Observer – ইসলামের কথা বলে