
বাংলাদেশে চাঁদাবাজি: শীর্ষ ৫ দল ও সংস্থা
বাংলাদেশে চাঁদাবাজি: শীর্ষ ৫ দল ও সংস্থা ? বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সংস্থা দ্বারা চাঁদাবাজির অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই প্রচলিত। ক্ষমতাসীন দল থেকে শুরু করে বিরোধী দল, ছাত্র সংগঠন এবং এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পর্যন্ত চাঁদাবাজির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, পরিবহন শ্রমিক থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীরা পর্যন্ত এই চাঁদাবাজির শিকার হয়। মূলত রাজনৈতিক ক্ষমতা, প্রশাসনিক দুর্বলতা ও দুর্নীতির কারণে এই চাঁদাবাজির সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। এখানে আমরা বাংলাদেশের পাঁচটি প্রধান দল ও সংস্থার চাঁদাবাজির ইতিহাস, পদ্ধতি ও সংশ্লিষ্ট সংগঠন নিয়ে আলোচনা করবো।
১. বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (AL)

কারণ:
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় রয়েছে (২০০৯-২০২৪)। এই সময়ে দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম পর্যায়ের নেতারা বাজার, পরিবহন, নির্মাণ খাত এবং সরকারি টেন্ডার থেকে চাঁদা আদায়ের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষমতার সুযোগ নিয়ে তারা সাধারণ জনগণ ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করেছে।
চাঁদাবাজির ক্ষেত্র:
পরিবহন খাত: বাস, ট্রাক ও মালবাহী যানবাহন থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলা হয়।
বাজার ও ব্যবসা: দোকান ও মার্কেটের মালিকদের কাছ থেকে মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা আদায় করা হয়।
টেন্ডারবাজি: সরকারি প্রকল্প ও নির্মাণ কাজে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে চাঁদা নেওয়া হয়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান: ভর্তি, আবাসন ও বিভিন্ন একাডেমিক কার্যক্রমে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সংগঠন:
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ – আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন, যারা ক্যাম্পাসে হল দখল, ভর্তি বাণিজ্য এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা তোলার অভিযোগে বহুবার অভিযুক্ত হয়েছে।
২. বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (BNP)

কারণ:
বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল (১৯৯১-১৯৯৬, ২০০১-২০০৬), তখনও তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ ছিল। স্থানীয় পর্যায়ে তাদের নেতা-কর্মীরা বাজার, পরিবহন ও ব্যবসা খাতে প্রভাব বিস্তার করে অর্থ আদায় করতেন। ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের পরও বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
চাঁদাবাজির ক্ষেত্র:
পরিবহন খাত: বাস-মিনিবাস থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করা হয়।
ব্যবসায়ী ও মার্কেট: ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করা হয়।
রাজনৈতিক সহিংসতা: রাজনৈতিক মিছিল ও কর্মসূচিতে অর্থ জোগাড়ের জন্য স্থানীয়ভাবে চাঁদা তোলা হয়।
সংশ্লিষ্ট সংগঠন:
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল – বিএনপির ছাত্র সংগঠন, যারা বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে শিক্ষার্থীদের থেকে টাকা আদায় এবং বিভিন্ন ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে।
৩. জাতীয় পার্টি (JP)

কারণ:
জাতীয় পার্টি বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ক্ষমতার অংশীদার ছিল। এর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধেও স্থানীয় পর্যায়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির তুলনায় তাদের চাঁদাবাজির মাত্রা কিছুটা কম।
চাঁদাবাজির ক্ষেত্র:
ব্যবসা ও দোকানদারদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি।
স্থানীয় রাজনৈতিক আধিপত্য বজায় রাখতে অর্থ আদায়।গণপরিবহন ও ছোটখাট ব্যবসার ওপর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন।
সংশ্লিষ্ট সংগঠন:
জাতীয় ছাত্র সমাজ – জাতীয় পার্টির ছাত্র সংগঠন, যারা বিভিন্ন সময়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
৪. জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ

কারণ:
জামায়াতে ইসলামী সরাসরি চাঁদাবাজির সাথে সম্পৃক্ত না হলেও, তাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ব্যবসা ও এনজিওগুলোর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রে অনৈতিক পন্থা অবলম্বনের অভিযোগ উঠেছে।
চাঁদাবাজির ক্ষেত্র:
ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও এনজিও থেকে তহবিল সংগ্রহ।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রভাব বিস্তারের জন্য অর্থ আদায়।
স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য চাঁদা তোলা।
সংশ্লিষ্ট সংগঠন:
ইসলামী ছাত্র শিবির – জামায়াতের ছাত্র সংগঠন, যারা বিভিন্ন সময়ে সহিংসতা, শিক্ষার্থীদের ওপর চাঁদাবাজি ও ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।
৫. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (পুলিশ)

যদিও এটি কোনো রাজনৈতিক দল নয়, পুলিশ প্রায়ই রাজনৈতিক দলের নির্দেশে বা তাদের সাথে মিলে চাঁদাবাজিতে জড়িত থাকে। পরিবহন খাত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় বাজার থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।
চাঁদাবাজির ক্ষেত্র:
পরিবহন খাত: ঢাকার টার্মিনাল, আন্তঃজেলা বাস ও ট্রাক থেকে প্রতিদিন চাঁদা নেওয়া হয়।
অবৈধ ব্যবসা: হকার, ফুটপাত ব্যবসায়ী ও রেস্টুরেন্ট মালিকদের কাছ থেকে মাসিক চাঁদা নেওয়া হয়।
মামলা ও জেল: ফৌজদারি মামলার আসামিদের কাছ থেকে ঘুষ বা চাঁদা আদায় করা হয়।
সম্পর্ক:
ক্ষমতাসীন দলের সাথে যোগসাজশে পুলিশ অনেক সময় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর চাঁদাবাজির দায় চাপিয়ে দেয়।স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় চাঁদাবাজি অব্যাহত থাকে।
বাংলাদেশে চাঁদাবাজি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতির একটি বড় অংশ। ক্ষমতাসীন দল থেকে শুরু করে বিরোধী দল, ছাত্র সংগঠন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পর্যন্ত সবাই কোনো না কোনোভাবে এই অবৈধ অর্থ সংগ্রহের সাথে যুক্ত। সাধারণ জনগণ, ব্যবসায়ী ও পরিবহন শ্রমিকরা এই চাঁদাবাজির প্রধান শিকার। প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন না হলে চাঁদাবাজির এই চক্র বন্ধ করা কঠিন হবে।
(বি.দ্র.: এই প্রতিবেদন বিভিন্ন সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি, যার সবকিছু যাচাই করা সম্ভব নয়। চাঁদাবাজির অভিযোগ রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে ভিন্ন হতে পারে।)