
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের মন্তব্য ইজরায়েল গণহত্যা করছে না
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের মন্তব্য ইজরায়েল গণহত্যা করছে না
মধ্যপ্রাচ্যের রক্তক্ষয়ী সংঘাত ও মানবিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপটে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে.ডি. ভ্যান্স সম্প্রতি এক বিতর্কিত মন্তব্য করে বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছেন। তিনি এক টুইট বার্তায় তার মন্তব্য প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন “ভ্যান্স মনে করেন না ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালাচ্ছে। “
ভ্যান্সের এই অবস্থানকে অনেকেই তাঁর “আমেরিকা ফার্স্ট উইথ আ ইসরায়েল এক্সেপশন” নীতির ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখছেন। ২০২৪ সালের আগস্টে আল জাজিরা এক বিশ্লেষণে উল্লেখ করেছিল, তিনি বরাবরই ইসরায়েলের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়ে আসছেন। তাঁর মতে, ইসরায়েলের সকল সামরিক পদক্ষেপ আত্মরক্ষার জন্য এবং তা কোনওভাবেই গণহত্যার উদ্দেশ্যে পরিচালিত নয়।

তবে, ফিলিস্তিনপন্থী সংগঠন ও মানবাধিকারকর্মীরা এই মন্তব্যকে একতরফা রাজনৈতিক অবস্থান হিসেবে দেখছেন। তাঁদের দাবি, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান অভিযান ও নিরীহ মানুষের মৃত্যু সরাসরি গণহত্যার আলামত বহন করে এবং এর হাজার হাজার প্রমাণ রয়েছে।
গণহত্যার বাস্তবতা: পরিসংখ্যান কী বলছে?
ভ্যান্সের বক্তব্যের বিপরীতে, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য পরিস্থিতিকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করছে।মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের মন্তব্য ইজরায়েল গণহত্যা করছে না
আল জাজিরা (৮ জুন ২০২৫) জানায়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী রাফাহ ও বৈরুত অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে অন্তত ৯ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে, যারা তখন মানবিক সহায়তা সংগ্রহে বের হয়েছিল।
জাতিসংঘের ২০২৩ সালের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০০৮ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ৪০,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই নারী ও শিশু। সাম্প্রতিক তথ্য (৪ মে ২০২৫) অনুযায়ী, শুধু গাজাতেই নিহতের সংখ্যা ৫২,৫৩৫, যার মধ্যে ৭০% নারী ও শিশু।

এই পরিসংখ্যান ইঙ্গিত করে, সংঘাতের মাত্রা ও ক্ষয়ক্ষতি এতটাই ভয়াবহ যে ‘গণহত্যা’ শব্দটির প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলা যুক্তিযুক্ত। তাই তিনি যে বলছেন এটি শুধু ইজরায়েলের নিরাপত্তার জন্য করা হচ্ছে এটি নিহাত মিথ্যা কথা ছাড়া কিছু না?
১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের গৃহীত গণহত্যা কনভেনশন অনুযায়ী, কোনও নির্দিষ্ট জাতি, ধর্ম বা গোষ্ঠীকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যই গণহত্যার সংজ্ঞায় পড়ে। যা ইজরায়েল অক্ষরে অক্ষরে পালন করে ফিলিস্তিনিদের গণহত্যা করছে।
ফিলিস্তিনপন্থীরা দাবি করছেন, ইসরায়েলের দফায় দফায় সামরিক অভিযান, অবরোধ ও জনগণের বাস্তুচ্যুতি এই সংজ্ঞার সাথেই সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিপরীতে, ভ্যান্স ও তাঁর সমর্থকরা একে সামরিক প্রতিরক্ষার অংশ হিসেবে দেখিয়ে গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করছেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপট

জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল (OHCHR) ইতোমধ্যে গাজায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর শঙ্কা প্রকাশ করেছে এবং এ পরিস্থিতিকে ‘গণহত্যার ঝুঁকিতে থাকা অবস্থা’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়, তবে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে। অনেকেই মনে করছেন, ভ্যান্সের মন্তব্য শুধু রাজনৈতিক অবস্থান নয়, বরং আন্তর্জাতিক মানবিক দায়িত্বে অবহেলারও ইঙ্গিত বহন করে।
জে.ডি. ভ্যান্সের মন্তব্য বিশ্বজুড়ে শুধু রাজনৈতিক বিতর্ক নয়, বরং একটি গভীর নৈতিক প্রশ্নও উত্থাপন করেছ।
নিরীহ মানুষের জীবন রক্ষায় আন্তর্জাতিক সমাজের ভূমিকা কী হওয়া উচিত? গণহত্যা কি শুধুই আইনি সংজ্ঞার বিষয়, নাকি মানবতার মৌলিক বিবেচনারও অংশ?
বিশ্ব আজ এই প্রশ্নগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে। সত্য, ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকারের পক্ষে অবস্থান নেওয়াই সময়ের দাবি। তাই বিবেকবানেরা জাগ্রত হোন। আর প্রতিবাদ করুন অন্যায়ের বিরুদ্ধে।মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের মন্তব্য ইজরায়েল গণহত্যা করছে না